ইফ্ফাত আরা
শামসুন নাহার ইফ্ফাত আরা, ইফ্ফাত আরা নামে পরিচিত, একই সাথে লেখক, সমাজকর্মী ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সংগঠক। প্রথাগতভাবে তার সাহিত্যের কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫০-এর শেষের দিকে দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ পত্রিকাগুলিতে ছোটগল্প প্রকাশের মধ্যদিয়ে মাসিক আজাদ তাদের মধ্যে অন্যতমছিল। তিনি তার শীর্ণ/ভগ্ন দেহ ও বয়সের বাধা অতিক্রম করে তার সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইফ্ফাত আরা | |
---|---|
![]() ২০০৬ এ তোলা ইফ্ফাত আরা এর ছবি | |
জন্ম | শামসুন নাহার ইফ্ফাত আরা ১৯৩৯ |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() ![]() |
শিক্ষা | মাষ্টার্স (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য) |
যেখানের শিক্ষার্থী | আনন্দমোহন কলেজ |
পেশা |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | এ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ তালুকদার |
সন্তান | ৩ জন (২ ছেলে ও ১ মেয়ে) |
জন্ম
ইফ্ফাত আরা কিশোরগঞ্জ শহরে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী কাজী আবদুল হাকিম এবং মাতা হাফিজা খানম।[1]
শিক্ষা
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্যে ছোটবেলা থেকেই তাকে সংগ্রাম করে চলতে হয়েছে। কোরআন শরীফ পাঠ শিক্ষা নেবার জন্যে নিজ বাসগৃহে আরবি ভাষা থেকেই তার শিক্ষা জীবন শুরু। তিনি ময়মনসিংহ মুসলিম বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং তাকে বিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় কারণ তৎকালীন সময়ে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় হিসাবে দেখা হতো [1]। শিক্ষানুরাগী ইফ্ফাক আরা প্রতিবাদী হয়ে উঠেন এবং আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে হলেও শহরের বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ হবার আগেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তবে সৌভাগ্যের বিষয় এর ফলে তার শিক্ষার দুয়ার বন্ধ হযে যায়নি, তিনি পরবর্তী বছর তৎকালীন মেট্রিক (এস এস সি এর সমমান) পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তিন্ন হন মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ১৯৬৬ সালে স্মাতক ডিগ্রি লাভ করে ময়মনসিংহ মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় হতে সফলভাবে ১৯৬৯ সালে বি এড (ব্যচেলর অব এডুকেশন) সম্পুর্ণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ (মাষ্টার্স ইন আর্টস) ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাদারী কর্মজীবন
১৯৬৮ সালে নাসিরাবাদ বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৭২ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলার দর্পন এর মহিলা পাতার সম্পাদিকা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে একই প্রকাশনা যখন মাসিক চন্দ্রাকাশ মহিলা পত্রিকা প্রকাশের উদ্দোগ নেয় তাকে সেখানে প্রধান সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চন্দ্রকাশে তিনি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন।
নারী আন্দোলন
ময়মনসিংহ এ নারী স্বাধীনতা বা নারী আন্দোলন এর প্রধান রূপকার ইফ্ফাত আরা, ১৯৬০ সাল থেকে তিনি তৎপর। ১৯৬৬ সালে তিনি অল পাকিস্তান ওমেনস এ্যসোসিয়েশনস এর সদস্যপদ প্রাপ্তির পর থেকে সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে আরো সক্রিয় হয়ে উঠেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের জন্মলগ্নেই তিনি সমমনা কয়েকজনের সাথে মিলিত হন তাদের মধ্যে লেখিকা হেলেনা খান, সুফিয়া করিম, রাজনীতিবিদ মরিয়ম হাসিমুদ্দিন উল্লেখযোগ্য এবং মহিলা সমিতি গঠনের উদ্যোগ নেন। তার হাত ধরেই ময়মনসিংহে জাতীয় মহিলা সংস্থা এর অধ্যায় এর সূচনা হয় যা পরবর্তীতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পায়। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে ময়মনসিংহ শহরে ১৯৮৮ উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈবাহিক জীবনের শুরু থেকেই তিনি রাজনীতির সংস্পর্শে ছিলেন কিন্তু যোগদানে আগ্রহ পোষন করেননি।
বৈবাহিক জীবন
তিনি ১৯৫৫ সালে শহরের তরুন আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ আবদুল লতিফ তালুকদার এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ইফ্ফাত আরা শিক্ষার প্রতি তার একান্ত অনুরাগ এবং স্বামীর অকৃত্তিম সহযোগীতায় বৈবাহিক জীবনের দশ বছর পরেও পুনবার শিক্ষায় ফিরে আসেন এবং স্মাতক, বি এড ও স্মাতকোত্তর ডিগ্রি লাভে সমর্থ হন। তার তিন সন্তান (দুইটি ছেলে এবং একটি মেয়ে) এবং প্রত্যেকে উচ্চ শিক্ষিত ও তারা নিজ অঙ্গনে সু-প্রতিষ্ঠিত। ছেলেরা একজন ব্রাসেলস এর বাংলাদেশ দূতাবাসে বাণিজ্য সচিব হিসাবে এবং অন্যজন ঢাকার এ্যপোলো হসপিটাল এ ডাক্তার হিসাবে কর্মরত এবং মেয়ে মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ এ অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।
প্রকাশনা
ইফ্ফাত আরা এর নিজ নামে নয়টি বই প্রকাশ হয়েছে, সেগুলি উপন্যাস, ছোটগল্প সমগ্র ও শিশুদের জন্যে সাধারন জ্ঞান ও প্রবন্ধ। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রীয় কবিতা নামে সংকলিত কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন যেখনে মূলতঃ ১৮০০ শতকের পরবর্তী বাংলা কবিতার সংকলন করা হয়।[2] মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্যে তার সাধারন জ্ঞান বিষয়ক বই শোনা আছে জানা নাই এক অনবদ্য অবদান ১৯৯০ হতে নিয়মিত এর হালনাগাদ সংস্করন প্রকাশ হচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যসূত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ২০০০ সালে তার উপন্যাস সুখ যখন শেষ বেলায় প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তিনি কিশোরদের জন্যে ছোট গল্পসমগ্র এর কাজ করছেন।
দ্বিতীয় চিন্তা প্রকাশনা
১৯৮৬ সালে নিজ বাসগৃহে একখানা ছাপাখানা মেশিন বসান এবং চিন্তা নামে মাসিক সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করেন পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে পত্রিকাটি দ্বিতীয় চিন্তা নামে পরিবর্তিত হয়। দ্রুত তার গৃহ সেনবাড়ী রোডের ইফফাত ম্যানসন পত্রিকা প্রকাশের স্থান হয়ে উঠে ময়মনসিংহ এর সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠে। ১৯৯৯ সালের কবি জীবনানন্দ দাশ এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দ্বিতীয় চিন্তা এক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে যা সৃজনশীল পরিকল্পনা, উচ্চমানের সম্পাদনা ও সংকলন এর অসামান্য নিদর্শন। দ্বিতীয় চিন্তা এ স্থানীয় লেখক ও সাহিত্যিক ছাড়াও অনেক প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক এর নিবন্ধ ও কবিতা ছাপা হয়।[1][3]
ব্যক্তিত্ব এবং দর্শন
”কাজই জীবন, জীবন মানেই কাজ” ইফ্ফাত আরার প্রধান নীতি। তিনি নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং বিবাহকে কখনই স্বাধীনতার বাধা হিসাবে মনে করেন না। তিনি ধর্মনুরাগী এবং বিশ্বাস করেন ইসলাম সমসাময়িক জীবনে চলার জন্যে কোন মুসলিম নারীর পথের বাধা নয়। ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন প্রচন্ড অতিথিপরায়ন এবং ময়মনসিংহ শহরের সবার পছন্দের ও শ্রদ্ধার পাত্র। সফলভাবে ও সুশিক্ষায় সন্তান পালনের মধ্যদিয়ে তিনি তার ব্যস্ততার মাঝে পারিবারিক জীবনে উত্তম মাতৃস্নেহের নিদর্শন রেখেছেন। বর্তমানে তিনি অবসর সময় লেখনী, বাগান এবং তরুন লেখক ও সাহিত্যিকদের উৎসাহদানের মধ্যে অতিবাহিত করেন।
সম্মাননা ও পুরস্কার
তথ্যসূত্র
- "ইফ্ফাত আরা - একজন মার্জিত লেখক" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্যা ডেইলি ষ্টার। ফেব্রুয়ারী ০৩, ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ 8 ডিসেম্বর 2016। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - লেখক অভিধান। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। ১৯৯৯।
- "সাহিত্যের আড্ডা থেকে আবির্ভাব"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ৮ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।