ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ

'ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ, সংক্ষেপে আই সি ডি ডি আর, বি (ICDDR,B) বাংলাদেশের একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান।[1] এর পূর্ণ পূর্ণ ইংরেজি নাম হচ্ছে "International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh" যার অর্থ "আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ"। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং এর দায়িত্ব হচ্ছে উদরাময় রোগ, পুষ্টি এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করা।[2]

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ
লোগো
সংক্ষেপেICDDR,B
নীতিবাক্যKnowledge for Global life saving solutions
গঠিত১৯৬০ (1960)
উদ্দেশ্যউদরাময় রোগ গবেষণা
সদরদপ্তরঢাকা,
অবস্থান
Executive Director
John D. Clemens,MD
Notable researchers
Dilip Mahalanabis
Colin Munro MacLeod
Richard A. Cash
David R. Nalin
ওয়েবসাইটwww.icddrb.org
প্রাক্তন নাম
Pakistan-SEATO Cholera Research Laboratory
ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি'র প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশ পথ

ইতিহাস

সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে একসময় কলেরা রোগের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছিল। মূলত এই প্রাণ সংহারক রোগকে মূলোৎপাটিত করার প্রত্যয়েই প্রথম এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এই রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কার্যকারণ সৃষ্টি হয়েছে ভিয়েতনাম যুদ্ধ সময়। সে সময় অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে সমাজতন্ত্রের বিস্তার রোধকল্পে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় চুক্তি সংস্থা (সিয়াটো) গঠিত হয় এবং এই সংস্থা এই এলাকায় যুদ্ধরত অ্যামেরিকান সৈন্যদের স্বাস্থগত নিরাপত্তার তাগিদে কলেরা গবেষণার একটি কাঠামো স্থাপনের জন্য সমর্থন জোগায়। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ঢাকায় কলেরা গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। বাংলাদেশ যেহেতু তখন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল তাই পাকিস্তান সরকার এবং সিয়াটোর যৌথ প্রকল্পের অধীনে ১৯৬০ সালে এই সংস্থার নাম রাখা হয় "পাকিস্তান কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি" (Pakistan Cohlera Research Laboratory)।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায় এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ নামধারণ করে। এর পর কিছুদিন এর অবস্থা কিছুটা খারাপ থাকলেও অচিরেই আবার এর কার্যক্রম শুরু হয় এবং নাম পরিবর্তন করে শুধু "কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি" রাখা হয়। বাংলাদেশের বেশ কিছু উদ্যোগী বিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক কয়েকজন বিজ্ঞানীর একটি দল ১৯৭৮ সালে এই "কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরিকে" একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুপ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করে। সরকার এ প্রস্তাবে সায় দেয় এবং জাতীয় সংসদের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে একে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখনই এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম দেয়া হয়।

প্রশাসন ও কর্মপদ্ধতি

আই সি ডি ডি আর বি-এর প্রশাসনিক দায়িত্বভার পালনের জন্য ১৭ সদস্যের একটি বোর্ড অফ ট্রাস্টি (Board of Trustees) রয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানীকে বাংলাদেশ সরকার মনোয়ন প্রদান করে। এই বোর্ড তিন বছরের জন্য কেন্দ্রের নির্বাহী প্রশাসক হিসেবে একজন পরিচালক নিযুক্ত করে এবং সাধারণত তার কার্যকাল দ্বিতীয়বার নবায়ন করা হয়। এতে কর্মরত বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বর্তমান সংখ্যা প্রায় ১,৪০০। বাৎসরিক বাজেট প্রায় ১২০ লক্ষ মার্কিন ডলার যার শতকরা ৮০ ভাগ বেতনবাবদ ব্যয় হয়।

এই কেন্দ্রের সব গবেষণার মূল্যায়ন করার জন্য "রিসার্চ রিভিউ কমিটি" (Research Review Committee) নামক একটি কমিটি রয়েছে। এর মূল আয়ের উৎস হল বাংলাদেশ সরকার এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর অণুদান। প্রধান দাতাগোষ্ঠীর হচ্ছে:- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সৌদী আরব, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আর অর্থসংস্থানে অংশগ্রহণককারী আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের মধ্যে রয়েছে:- ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব ব্যাংক, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, রকফেলার ফাউন্ডেশন, সাসাওয়াকা ফাউন্ডেশন এবং আরও কিছু বেসরকারি সংস্থা।[3]

এর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক চারটি শাখা রয়েছে। শাখাগুলির কার্যক্রমের মাধ্যমে এই কেন্দ্রে প্রতিবছর প্রায় ১২,০০০ উদরাময় রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। প্রধান এই শাখাগুলি হল:

  • ক্লিনিক্যাল বিজ্ঞান শাখা
  • গবেষণা বিজ্ঞান শাখা
  • সামাজিক স্বাস্থ্য শাখা
  • জনসংখ্যা সম্প্রসারণ শাখা

কার্যক্রম

ঢাকা শহর থেকে ৬০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায় এই কেন্দ্র পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের একটি গবেষণা স্টেশন আছে। এখানে বসবাসকারী প্রায় ২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর সমীক্ষা পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণই এই স্টেশনের উদ্দেশ্য। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই স্থানে কলেরা রোগের বিভিন্ন টিকার কার্যকারিকার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এখানে ঔষধ, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা নিন্ত্রণের উপরও গবেষণা পরিচালিত হয়।

সম্প্রতি আই সি ডি ডি আর বি-এর গবেষণা কার্যক্রমের বিস্তার আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে। নতুন অন্তর্ভুক্ত গবেষণার ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাসরোগ, যৌনরোগ, এইডস, হেপাটাইটিস, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা ও বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি।

বিশেষ অবদান

এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল ওরস্যালাইন (ORS- Oral Rehydration Solution) উদ্ভাবন। এই দ্রবণ লবণ এবং গুড়ের সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয়। উদরাময়ে আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়া দেহরসের পুনঃযোগান দেওয়ার মাধ্যমে এটি রোগীকে সুস্থ করে তোলে।

আইসিডিডিআর,বি-এর বিশিষ্ট গবেষকবৃন্দ

  • কলিন ম্যাকলয়েড

প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ

তথ্যসূত্র

  1. Zia Uddin Ahmed (২০১২)। "ICDDR,B"। Sirajul Islam and Ahmed A. Jamal। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh। ৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৪
  2. "ORS: The medical advance of the century"। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১১ Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  3. "Children's Health Foundation - Unusual rise in patient numbers at ICDDR,B's Dhaka Hospital"। ২২ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৪

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.