ইতালির ইতিহাস

ইতালির ইতিহাস এর প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক সময় নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে। প্রাচীন কালে ইতালি ছিল রোমানদের স্বদেশভূমি এবং রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান শহর। খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালে রোম নগরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫০৯ সালে এটি একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় যখন সিনেট এবং সাধারন জনগন দ্বারা রাজতান্ত্রিক সরকার কে উচ্ছেদ করা হয়। এরপর রোমান প্রজাতন্ত্রটি উপদ্বীপের ইরটাস্কানস, সেল্টস এবং গ্রীকদের নিয়ে ইতালিকে একীভূত করেছিল। এরপর রোম ইটালিক জনগণের ফেডারেশনকে পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং নিকট পূর্বের এপিরাস, গৌল, ব্রিটেন, হিস্পানিয়া, লুসিটানিয়া, বাল্কানস, ডাসিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, জার্মানি, মিশর, কার্থেজ, মরেটানিয়ায় কিছু অংশ জয় করে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সাথে আরো ছিল নুমিডিয়া, লিবিয়া, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, আর্মেনিয়া, জুডিয়া এবং আরবের কিছু অংশ।

খ্রিস্টপূর্ব ২৭ সালে সিজার অগাস্টাস প্রথম রোমান সম্রাট হয়ে পপুলারেস এবং অপটিমেটদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে প্যাক্স রোমানার সূচনা করেছিলেন। ইতালি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির মূল কেন্দ্রে ছিল। যেমন (খনিকরণ, স্যানিটেশন এবং স্মৃতিসৌধের রাস্তা, সেতু এবং জল সরবরাহ), অর্থনীতি (চীন, ভারত এবং উপ-সাহারান আফ্রিকার সাথে মারি নস্ট্রাম এবং বাণিজ্য), আর্ট (প্যানথিয়ন, আরা পাকিস, মার্বেল ভাস্কর্য, পম্পেইয়ান স্টাইলস), এবং সাহিত্য (আেনিড, রূপান্তরকারী, ডি রেরুম নাটুরা, ন্যাচারালিস হিস্টোরিয়া, অ্যাব আরবে কন্ডিটা)। বিভিন্ন সম্রাট বৈদেশিক নীতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে সফল হয়েছিল (ক্লাউডিয়াস, ভেস্পাসিয়ান, ট্রাজান, মার্কাস অরেলিয়াস) অন্যরা ভৌতিক স্বৈরশাসকের চরিত্রে অভিনয় করেছিল (কালিগুলা, নেরো, ডমিশিয়ান, কারাকালা)। তৃতীয় শতাব্দীর সামরিক নৈরাজ্য পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার দিকে পরিচালিত করে। উভয় অংশই মিলানের এডিক্ট দিয়ে খ্রিস্টানদের অত্যাচারের অবসান ঘটিয়েছিল এবং থিসালোনিকার এডিক্টের মাধ্যমে রোমের বিশপকে ধর্মীয় আধিপত্য প্রদান করেছিল। ৪৭৬ সালে রোমান সাম্রাজ্যের পশ্চিম অংশে ফ্লাবিয়াস ওডোসার সম্রাট রোমিউলাস অগাস্টাস কে যুদ্ধে পরাজিত করে। তারপর পশ্চিম অংশ দখলে যায় ফ্লাবিয়াস ওডোসারের ক্ষমতায় এবং সাম্রাজ্যের পূর্ব অংশ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের কাছে পরাজিত হয়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। এভাবেই রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়।

মধ্যযুগের প্রথমদিকে, ইতালিয়ান উপদ্বীপ গোথ, বাইজেন্টাইনস এবং লম্বার্ডস দ্বারা একাধিক যুদ্ধের লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল।৮০০ সালের ক্রিসমাসের দিন তৃতীয় পোপ লিও জার্মানির শাসক চারলেমাগনকে পবিত্র রোমান সম্রাটের উপাধিতে এবং পাপাল রাজ্যগুলিকে বাদ দিয়ে উত্তর ইতালির সার্বভৌম হিসাবে ভূষিত করেছিলেন। রোমান পন্টিফ এবং জার্মানি সম্রাট ইতালি এবং ইউরোপের সর্বজনীন শক্তি হয়ে ওঠেন, কিন্তু এরপরে তারা ইনভেসটিচার কনট্রোভার্সি তে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের দলগুলির (গেল্ফস এবং গিবেলাইনস) মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ১০৭৭ সালে যখন পোপ সপ্তম গ্রেগরী ও তার অনুসারী তাস্ক্যানির মতিদিলার সামনে রোমান সম্রাট চতুর্থ হেনরী কে অপমানজনক "[1] হিউমিলিয়েশন অব ক্যানোসা" তে বাধ্য করা হয় তখন পোপ আর সম্রাটের দ্বন্দ শেষ পর্যন্ত ইতালিতে সামন্ততান্ত্রিক - সাম্রাজ্যবাদের পতনের দিকে ধাবিত করে । এরপর ১১৭৭ সালে লেগানানো যুদ্ধের পরে ফ্রেড্রিখ বারবারোসা এবং পোপ আলেকজান্ডার তৃতীয় এর মধ্যে ভেনিসের চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এরপর টেম্পোরাল কর্তৃপক্ষের দাবিতে পাপালকে ডিকটায়টাস পাপেই এবং তৃতীয় লেটারান কে কাউন্সিলের সামনে হাজির করা হয়েছিল। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ইতালি কমিউ্যনি নামে প্রজাতান্ত্রিক নগর রাষ্ট্রে সংগঠিত হয়েছিল, কিন্তু এর মধ্যে সিসিলি বাদ পড়ে যা নরম্যানদের দ্বারা গঠিত এবং সম্পূর্ণ মেজোগিওর্নোকতে অন্তর্ভুক্ত হইয়েছিল। ১০৯৫ সালে, পোপ আরবান ২য় প্রথম ক্রসেডের ডাক দিয়েছিল এবং ভূমধ্যসাগরীয় মেরিটাইম রিপাবলিক যেমন ভেনিস, জেনোয়া, পিসা, অ্যামালফি ইত্যাদি নগর রাস্ট্রের সাথে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য চালু করেছিল। ফলাফলটি ছিল একটি ইতালীয় বাণিজ্যিক বিপ্লব, যা ইউরোপীয় অর্থনীতিকে কৃষিক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যে পরিবর্তন করে এবং ইতালিতে ব্যাংকিং ও বিশ্ববিদ্যালইয়ের জন্ম দেয়। ১১৯৮ এবং ১২১৫ এর মধ্যে, পোপ ইনোসেন্ট(৩য়) ফ্রান্সিসকান এবং ডোমিনিকান অর্ডারকে অনুমোদন করে এবং চতুর্থ ক্রসেডের সময় ভেনিসকে কনস্ট্যান্টিনোপলকে[2] দখল ও লুটপাটের অনুমতি দেয়। ইনোসেন্ট তৃতীয় ইউরোপের বেশ কয়েকটি রাজ্যকে প্যাপা ফিফে পরিণত করেছিল এবং জার্মান সম্রাট অটো চতুর্থকে সিসিলিয়ান রাজা ফ্রেডরিক দ্বিতীয় এর পরিবর্তে প্রতিস্থাপন করেছিল। ফ্রেডেরিক দ্বিতীয় অগ্নিপরীক্ষার পর জীবিত থাকে এবং ইতালিকে পবিত্র রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি বৃহত্তর রাজত্বের সাংস্কৃতিক এবং কৌশলগত কেন্দ্র করে তুলেছিল যা পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য এবং ষষ্ঠ ক্রসেডের পর জেরুজালেম কেও অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয় ফ্রেডরিক মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অধীনে যেতে অস্বীকার করেছিলেন এবং গোল্ডেন হোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযানের পরিকল্পনা করেছিলেন, তবে জার্মান রাজকুমার এবং ইতালিয়ান প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের ফলে ১২৫০ সালে তিনি নিহত হন। ১৩০০ সালে এর কাছাকাছি মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির শিখরে উঠে, এর মধ্যে জিয়াত্তোর চিত্র, দান্তের রচনা সমূহ এবং মার্কো পোলো ভ্রমণের কথা উল্লেখ করা যায়। দ্য ব্ল্যাক ডেথ অ্যান্ড ওয়েস্টার্ন শিজম শেষের দিকের মধ্যযুগের সংকট চিহ্নিত করেছিল।

মধ্যযুগ থেকে আধুনিকতার দিকে রূপান্তরকে চিহ্নিত করে রেনেসাঁর শুরু হয়েছিল ফ্লোরেন্সে (মেডিসি পরিবার দ্বারা শাসিত) এবং শিল্প, বিজ্ঞান, অন্বেষণ এবং দর্শনের রূপান্তরিত করে।

  1. "Road to Canossa"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-০১।
  2. "Sack of Constantinople (1204)"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-২৫।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.