আমির হোসেন (উদ্ভাবক)

আমির হোসেন একজন বাংলাদেশী উদ্ভাবক। বগুড়ায় কৃষি যন্ত্রপাতি ও হালকা প্রকৌশল শিল্পের অভাবনীয় বিপ্লবের মূল কারিগর তিনি। উদ্ভাবনের জন্য ২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) তাকে ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ ডিগ্রি প্রদান করে।[1]

আমির হোসেন
জন্ম১৯৬০
বগুড়া, বাংলাদেশ
কর্মক্ষেত্রকৃষি, যানবাহন
পরিচিতির কারণজ্বালানিবিহীন গাড়ি উদ্ভাবন

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

আমির হোসেন ১৯৬০ সালে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল জোব্বার কামারশালায় গরম লোহা পিটিয়ে বিকল যন্ত্র সারাতেন। যিনি ‘ধলু মেকার’ নামে বগুড়া শহরে পরিচিত ছিলেন।[2] ৫ বছর বয়স থেকে বাবার কামারশালাতে যাতায়াত ছিল তার।

১৯৭৮ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন বগুড়ার করনেশন ইনস্টিটিউশন থেকে। এরপর বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলেও বাবার কারখানায় কাজের চাপ বেড়ে যাওয়া ও পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে পড়াশোনা আর করতে পারেনি। ১৯৮২ সালে তিনি পরিবারের সম্মতি না নিয়েই বিয়ে করেন। এ কারণে তাকে বাড়ি ছাড়া হতে হয়। পরবর্তীতে ২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন কৃষি যন্ত্রাংশের ব্যবসা।[1]

উদ্ভাবনসমূহ

শুরুতে তিনি পানির পাম্প তৈরির কারখানা দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় অর্ধশতাধিক যন্ত্র নিজ কারখানায় উদ্ভাবন বা তৈরি করেছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সেমাই ও নুডলস তৈরির যন্ত্র, ইট ও পাথর ভাঙার যন্ত্র, ইট তৈরির অত্যাধুনিক যন্ত্র, খোয়া-সিমেন্ট-বালু মেশানোর যন্ত্র, মাছের ও মুরগির খাদ্য তৈরির যন্ত্র, ভুট্টা ভাঙা ও মাড়াইয়ের যন্ত্র, গো–খাদ্যের যন্ত্র, ধান-আখ–গম মাড়াই যন্ত্র, গুটি ইউরিয়ার যন্ত্র, আলু উত্তোলন ও গ্রেডিং যন্ত্র, চাল গ্রেডিং যন্ত্র, রাইস পলিসার, বীজ বপন যন্ত্র, ধান কাটার যন্ত্র, পাটের ছাল ছাড়ানোর যন্ত্র, প্লাস্টিক পাইপ তৈরির যন্ত্র, জ্বালানিবিহীন মোটরযান এবং উড়ন্ত গাড়ি, বিনোদন পার্কের রাইড, ডিশ অ্যানটেনা, বিস্কুট বানানোর যন্ত্র, অটোরিকশা, ভটভটি, অটোক্র্যাশার, অটো মিক্সচার, চিড়া-মুড়ি ভাজার যন্ত্র, ধানের খড় ও শুকনা ভুট্টার গাছ থেকে গো-খাদ্য তৈরির স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ইত্যাদি।

তার ইটভাঙার যন্ত্র তিস্তা সেতু, লালন শাহ সেতুসহ দেশের বৃহৎ সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে।[1]

জ্বালানিবিহীন গাড়ি

আমির হোসেনের উদ্ভাবিত প্রচলিত জ্বালানিবিহীন গাড়ির খবর ২০০৬ সালের দিকে ছাপা হয়েছিল দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে। এই গাড়ির জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয় কার্বন বার।[3] ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি মেলায় তার এই গাড়িটি প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তিনি সরকারিভাবে পুরস্কার অর্জনের পাশাপাশি ‘‌যন্ত্রবিজ্ঞানী’ খেতাব পান।

পরবর্তীতে আমিরকে জাপানের টয়োটা এবং ভারতের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিভিএস কোম্পানির পক্ষ থেকে জ্বালানিবিহীন গাড়িটি বাজারজাতকরণের প্রস্তাব দেয়। টয়োটা জ্বালানিবিহীন গাড়িটি জাপানে তৈরির প্রস্তাব দেয়। এছাড়া সপরিবারে সেখানে বসবাসের জন্য নাগরিকত্ব প্রদানেরও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু গাড়িতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা থাকবে না, এটি তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই টয়োটার প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দেন।[1]

তথ্যসূত্র

  1. "মেইড ইন বাংলাদেশ"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৭
  2. বাংলা, আহরার হোসেন বিবিসি; ঢাকা। "বাংলাদেশে হাজার কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রের শিল্প"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৭
  3. "আমির হোসেনের জ্বালানিবিহীন গাড়ি"। আগস্ট ২১, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৮
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.