আদিবাসী জনগণ

আদিবাসী জনগণকে প্রাথমিক দিকে প্রথম জাতি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, আদিম মানুষ, উপজাতি প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করা হত। আদিবাসী শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা ও তাদের অধিকার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক প্রচুর। জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরেও আদিবাসীদের ব্যাপারে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোন সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয় নি। সাধারণত কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অণুপ্রবেশকারী বা দখলদার জনগোষ্ঠীর আগমনের পূর্বে যারা বসবাস করত[1] এবং এখনও করে; যাদের নিজস্ব আলাদা সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে; যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে, তারাই আদিবাসী। আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন করা একেবারেই অনুচিত, কারণ তারা কোন জাতির অংশ নয় যে তাদের উপজাতি বলা যাবে। বরং তারা নিজেরাই এক একটি আলাদা জাতি।

পিগমি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একজন সদস্য

পাঁচটি মহাদেশে ৪০টির বেশি দেশে বসবাসরত প্রায় ৫,০০০[2] আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০[3] থেকে ৩৫ কোটি।[2][4] নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় যুগে যুগে এদের অনেকে প্রান্তিকায়িত, শোষিত, বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হয়েছে এবং যখন এসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে তারা কথা বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা দমন নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের আলোচনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়েছে এবং ১৯৯৩ সালকে "আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্ষ" ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত "আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশক" ঘোষণা করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। এছাড়া ১৯৯৫ সালের ৯ আগস্টকে "বিশ্ব আদিবাসী দিবস" ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়।

আদিবাসীদের অধিকার বিশেষ করে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়টি অনেক রাষ্ট্রের কাছে স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ ঐ সমস্ত দেশের জনগণের একটা বড় অংশই আদিবাসী (যেমন- কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, চীন, পাপুয়া নিউগিনি এবং অধিকাংশ লাতিন আমেরিকার দেশসমূহ)। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়টি এ সমস্ত দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে প্ররোচিত করবে যা ঐ সব দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি হুমকিস্বরূপ। অবশ্য সবখানে বাস্তবতা একই রকম নয়।

তথ্যসূত্র

  1. Coates, Ken S. (২০০৪)। A Global History of Indigenous Peoples: Struggle and Survival। New York: Palgrave MacMillan। আইএসবিএন 0-333-92150-X।
  2. "Indigenous issues"International Work Group on Indigenous Affairs। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৫
  3. WGIP (২০০১)। "Indigenous Peoples and the United Nations System"। Office of the High Commissioner for Human Rights, United Nations Office at Geneva।
  4. Bodley, John H. (২০০৮)। Victims of Progress (5th. সংস্করণ)। Plymouth, England: AltaMira Press। আইএসবিএন 0-7591-1148-0।

বহিঃসংযোগ

প্রতিষ্ঠানসমূহ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.