আড়ং (ঐতিহ্য)

গ্রামাঞ্চলের মেলাকে আড়ং বলা হয়। শব্দটি আধুনিক জন সমাজে প্রচলিত নয়। তবে নবদ্বীপের শাক্তরাস উৎসবে এটি পরিচিত নাম। কার্তিকী পূর্ণিমার দিন রাসকালী পূজার পর তার পরের দিন প্রতিপদে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবী মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয়। এই শোভাযাত্রা উপলক্ষ্যে মেলা বসে। একে আড়ং বলা হয়।[1]

নামের উৎস

আড়ং ফারসি শব্দ। বড় আকারের বাজারকে বোঝায় যেখানে অধিক পরিমাণে উৎপন্ন দ্রব্য বাজারজাত করা হয়। এ স্থানে ক্রেতা ও বিক্রেতাগণ হাটের দিনে বা হাটের দিন ছাড়াও ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে।

ইতিহাস

ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ আড়ং-এর ধারণাকে আরও অর্থবহ করে তোলে। কোম্পানি বাংলার বিভিন্ন বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বহুসংখ্যক ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে। এ ধরনের ক্রয়কেন্দ্রকে কোম্পানির পরিভাষায় ফ্যাক্টরি বা বাণিজ্যকুঠি বলা হতো। ফ্যাক্টরির দায়িত্বে নিয়োজিত শ্বেতাঙ্গ বা স্থানীয় এজেন্টকে বলা হতো ফ্যাক্টর বা কুঠিয়াল। স্থানীয় ফ্যাক্টরকে সাধারণত গোমস্তা বলা হতো। ফ্যাক্টর বা গোমস্তার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় কারিগর বিশেষ করে তাঁতিদের ফ্যাক্টরি এলাকায় বসবাসের ব্যবস্থা করা এবং নিজেদের সরবরাহকৃত নমুনা অনুযায়ী তাদের দ্বারা দ্রব্যাদি প্রস্ত্তত করিয়ে নেওয়া। ফ্যাক্টরির চারপাশে কারিগররা বসতি স্থাপন করে চুক্তি মোতাবেক অথবা স্বাধীনভাবে দ্রব্যাদি উৎপাদন করত। এভাবে ফ্যাক্টরি এলাকা মুখ্যত উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে এবং এ কেন্দ্রকে ফ্যাক্টরগণ আড়ং নামে আখ্যায়িত করে। এর ফলে তাদের ফ্যাক্টরিগুলি বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়।

কয়েকটি বিখ্যাত আড়ং

আঠারো শতকে কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আড়ং ছিল লক্ষ্মীপুর (নোয়াখালী), জাগদিয়া (নোয়াখালী, বর্তমানে সমুদ্রগর্ভে), কুমারখালী (যশোর), রামপুর-বোয়ালিয়া (রাজশাহী)। কোম্পানির আড়ং ছাড়াও অন্যান্য আড়ং ছিল। এগুলি ভগবানগোলা, কাসিমবাজার, ঢাকা ও সিলেটের মতো যোগাযোগ সুবিধাসম্পন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল। মুগল আমলে বাংলায় আড়ং ছিল বস্ত্তত বৃহৎ বস্ত্র বাজার। কিন্তু বস্ত্রবাজারকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও আড়ং-এ অন্যান্য বহুবিধ দ্রব্যাদিও ক্রয়-বিক্রয় হতো। অবশ্য আড়ং সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার ছিল না। বরাবরই আড়ং ছিল যুগপৎ পণ্য উৎপাদন ও পণ্য বিক্রয়ের স্থান। নগরায়ণের বিকাশ, নগরে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত হওয়া এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের ফলে বিশ শতকে সনাতন আড়ং প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের কেন্দ্র হিসেবে আড়ং বহু পূর্বে বিলুপ্ত হলেও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, দোকান ও বিপণি কেন্দ্রের আকারে আড়ং নামটি এখনও টিকে আছে।

তথ্যসূত্র

  1. সংবাদদাতা, নিজস্ব। "রাসে পরিবর্তনের ছোঁয়া, খুশি নবদ্বীপ - Anandabazar"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২২

আরো দেখুন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.