আজিজ সুপার মার্কেট

আজিজ সুপার মার্কেট বাংলাদেশের ঢাকা শহরে অবস্থিত একটি মাইলফলক স্থাপনা যা প্রধানত বই ও পোশাকের বাজার হিসাবেই প্রসিদ্ধ।[1] ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ চৌরাস্তা সংলগ্ন এলিফ্যান্ট রোডে এর অবস্থান। ১৯৮০-র দশকের মধ্যভাগ থেকেই আজিজ সুপার মার্কেট সাহিত্যপ্রেমী ও তরুণ কবিদের-লেখকদের প্রাত্যহিক তীর্থে পরিণত হয়। এখনো এটি সান্ধ্য আড্ডার জনপ্রিয় কেন্দ্র। দেশি-বিদেশি বইয়ের দোকানগুলোকে কেন্দ্র করেই এই আড্ডার সূত্রপাত। বইয়ের দোকানের পাশাপাশি অনেক রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠায় আড্ডার আবহ জোরদার হয়।

ইতিহাস

জনৈক আজিজুল ইসলাম বায়নাসূত্রে মালিকানা নিয়ে নিজ নামে শপিং কমপ্লেক্স কাম অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করেন ১৯৮১ সালে। পাঁচ বিঘা জমির ওপর এই সুপার মার্কেটের যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। ১৯৮৭ তে পাঠক সমাবেশ নামে একটি ক্ষুদ্রাকৃতি বইয়ের দোকানের মধ্য দিয়ে বই মার্কেট হিসেবে শুরু হয়েছিল এর যাত্রা। উদ্যোক্তা ছিলেন শহিদুল ইসলাম বিজু। নব্বই দশকের মাঝামাঝি নাগাদ এ মার্কেটের নিচ তলার প্রায় পুরোটা জুড়েই বইয়ের ছোট ছোট দোকান স্থাপিত হয়। অল্পদিনেই এ স্থান তরুণ লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। দোতলায় বেশ কিছু লেখালেখি ও প্রকাশনা সংক্রান্ত সংগঠন স্থাপিত হয়, যার মধ্যে অন্যতম আহমদ ছফা স্কুল। এ মার্কেটের সন্নিকটেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পাবলিক লাইব্রেরি। ফলে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ছুটে আসেন এখানে যখন-তখন। আজিজ সুপার মার্কেটকে এক কথায় পাঠাগারও বলা হতো প্রথম দিকে। তবে শুরু থেকেই এখানে বাংলাদেশি বই অপেক্ষা ভারতীয় বইয়ের সমাবেশ ছিল বেশি। মার্কেটটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তৃতীয় সহস্রাব্দের কয়েক বছর গড়িয়ে গেলে বইয়ের দোকানগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। অনেক বইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে যায়, ফাঁকা স্থান দখল করে নেয় পোশাক ও চা-নাশতার দোকান। তবে সাহিত্যিকদের একটি চুম্বক কেন্দ্র হিসেবে আজিজ সুপারমার্কেট তার আদি চরিত্র এখনো বজায় রেখেছে।

বর্তমান অবস্থা

১৯৮৭ সালে 'পাঠক সমাবেশ' নিয়ে আজিজ মার্কেটের যাত্রা শুরু।[2] এরপর বুক পয়েন্ট, প্রাকৃতজন, মনন, প্যাপিরাস, গ্রন্থ গ্যালারি, প্রাচ্য বিদ্যা, সুখ, এপিক ইত্যাদি নামে কয়েক বছরের মধ্যেই ৬০টির অধিক বইয়ের দোকান গড়ে ওঠে। এখন মার্কেটটিতে বইয়ের দোকান আছে মাত্র ত্রিশটির কাছাকাছি। আজিজ মার্কেটের সামনের খালি জায়গাজুড়ে এক সময় বৈশাখী, বর্ষা, স্বাধীনতা কিংবা অন্য শিরোনামে বইমেলার আয়োজন হতো। ফ্যাশন হাউসের পত্তনে সেসব মেলা আর হয় না। তবে এ মার্কেটের কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার উদ্যোগে ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরির সামনের খালি জায়গায় মেলার আয়োজন এখনও হয়। এখন মার্কেটটির নিচতলায় কেবল বইয়ের দোকান। নিচতলাসহ দোতলা থেকে শুরু হয়েছে টি-শার্টের দোকান, কিংবা ফ্যাশন হাউস। অথচ দোতলাতেই রয়েছে লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গণ, যা দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনের অন্যতম ঠিকানা। এ প্রাঙ্গণে পাওয়া যায় তিন শতাধিক লিটল ম্যাগাজিন। তাছাড়া বইয়ের দোকানগুলোতেও ছোট কাগজ পাওয়া যায়। বর্তমানে বিদ্যমান বইয়ের দোকানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পাঠক সমাবেশ, প্রথমা, সন্ধিপাঠ, প্যাপিরাস, সন্দেশ, জনান্তিক, পলল, পড়ুয়া, ঘাসফুল নদী, তক্ষশিলা, কথাপ্রকাশ, স্বরব্যঞ্জন-পাঠশালা প্রভৃতি।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.