অ্যানো ডোমিনি

অ্যানো ডোমিনি এবং খ্রিস্টপূর্ব শব্দদুটো ব্যবহার করা হয় জুলিয়ান ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে বছর গণনা করা বা আখ্যা দিতে। অ্যানো ডোমিনি শব্দটি মধ্যযুগীয় ল্যাটিন শব্দ এবং এর অর্থ হচ্ছে 'প্রভুর বছরে' কিন্তু প্রায়শই 'প্রভুর' জায়গায় 'আমাদের প্রভু' ব্যবহার করে শব্দটি উপস্থাপন করা হয়। অ্যানো ডোমিনি নেয়া হয়েছে মূল ল্যাটিন বাক্য "অ্যানো ডোমিনি নসু জেসু খ্রিস্টি" থেকে যার অনুবাদ দাঁড়ায় "আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টের বছরে"

এই দিনপঞ্জিকার যুগের ভিত্তি হলো ঐতিহ্যগতভাবে হিসেব করা নাযারেথ এর যিশুর জন্মের গর্ভধারণের বছর, যেখানে খ্রিস্টাব্দ হিসেব করে সে কালের পরের সময়, ক্রিস্টপূর্বাব্দ গুনতে থাকে সে যুগের শুরুর আগের বছরগুলো।(উল্লেখ্য ইংরেজি ভাষায় ক্রিস্টাব্দকে ‘এডি’ এবং খ্রিস্টপূর্বাব্দকে ‘বিসি’ নামসংক্ষেপ দিয়ে প্রকাশ করা হয়।) এ পদ্ধতিতে কোনো শুণ্য বছর নেই, যে কারণে প্রথম খ্রিস্টাব্দের সাথে সাথেই শুরু হয় ক্রিস্টপূর্ব প্রথম অব্দ। দিন গোনার এ পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয় ৫২৫ সালে স্কিথিয়া মাইনরের ডিওনিসিয়াস এক্সিগাস দ্বারা কিন্তু সব জায়গায় এর ব্যবহার ৮০০ সালের আগে শুরু হয় নি।[৯][১০]

গ্রেগরিয়ান ক্যলেন্ডার হচ্ছে আজকের বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার। দশকের পর দশক ধরে এটি হয়ে আছে অলিখিত বৈশ্বিক মানদণ্ড যা গ্রহণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের প্রায়োগিক স্বার্থে, পরিবহন, এবং এটিবাণিজ্যিক একীকরনে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন জাতিসংঘের দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

ঐতিহ্যগতভাবে ইংরেজি ভাষা ল্যাটিনের অনুসরণে নামসংক্ষেপ “এডি” বছর সংখ্যার আগে বসানো হয়।আবার, নামসংক্ষেপ “বিসি” বছর সংখ্যার পরে বসানো হয় যা একই সাথে অন্বিত ক্রমও সংরক্ষণ করে। এ নামসংক্ষেপগুলো শতাব্দী এবং সহস্রাব্দের পরেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় যেমন “ চতুর্থ শতাব্দী এডি” অথবা “দ্বিতীয় সহস্রাব্দ এডি” (যদিও রক্ষণশীল ব্যবহার আগে এ ধরনের অভিব্যক্তি প্রত্যাখ্যান করত)।[১৩] যেহেতু ‘বিসি’ হচ্ছে খ্রিস্টপূর্বের (বিফোর ক্রাইস্ট) ইংরেজি নামসংক্ষেপ, অনেক সময় ভুলবশত বলা হয় যে ‘এডি’ বোঝায় ‘ মৃত্যুর পর’ (আফটার ডেথ) অর্থাৎ যিশুর মৃত্যুর পর। কিন্তু এটা বোঝায় যে যিশুর জীবনকালের প্রায় ৩৩ বছর ‘বিসি’ বা ‘এডি’ কোনো সময়কালেই অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে না।১৪

আরো নিরপেক্ষ এবং অ-খ্রিস্টীয় মানুষদের দ্বারা বিবেচিত পরিভাষায় এই সময়কে বলা হয় বর্তমান যুগ (‘কমন এরা’ সংক্ষেপে ‘সি ই’) এবং পূর্ববর্তী বছরগুলোকে বর্তমান যুগপূর্ব (বিফোর কমন অর কারেন্ট এরা সংক্ষেপে ‘বি সি ই’) । জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত বছর গণনা এবং আই এস ও ৮৬০১ খ্রিস্টধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত শব্দ এড়িয়ে চলে, কিন্তু ‘এডি’ বছরের (খ্রিস্টাব্দ) একই সংখ্যা ব্যবহার করে।

ইতিহাস

অ্যানো ডোমিনি বছরগণনা পদ্ধতি ৫২৫ সালে ডিওনিসিয়াস এক্সিগাস কর্তৃক প্রণিত হয় তার ইস্টার সারণি গণনা করার জন্য। তার পদ্ধতি ছিল পুরনো ইস্টার সারণিতে চলে আসা ডিওক্লেটিয়ান যুগকে প্রতিস্থাপিত করা কারন তিনি এক অত্যাচারী শাসক যে কিনা খ্রিস্টানদের নর্যাতন করত তার স্মৃতিচারণ চালিয়ে যেতে চাননি।১৫ পুরোনো সারণির শেষ বছর, ডিওক্লেটিয়ান ২৪৭ বছরের পর তার সারণির প্রথম বছর ৫৩২ খ্রিস্টাব্দ বসান। তিনি যখন তার সারণি প্রণয়ন করেন, তখন জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের বছর সনাক্ত করা হত সে বছর অফিস গ্রহণ করা দূতদের নামের ওপর ভিত্তি করে- তিনি নিজেই বলেছিলেন যে “বর্তমান বছর” হচ্ছে “প্রবাস জুনিয়রের দূতিয়ালীর বছর” , যা ছিল ৫২৫ তম বছর “আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টের আবির্ভাবের সময় থেকে”।১৬ এভাবে ডিওনিসিয়াস বলেন যে যিশুর আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ৫২৫ বছর আগে , কোনো নির্দিষ্ট বছর না বলে যখন তাঁর জন্ম বা গর্ভধারণ ঘটেছিল। "যাইহোক, তার সারণির ব্যাখ্যার কোথাও ডিওনিসিয়াস তার কালকে অন্য কোনো বর্ষগণনা পদ্ধতির , যেমন দূতাবাসের, অলিম্পিয়াডের, বিশ্বের বয়স অথবা অগাস্টাসের রাজত্বকালের সাথে সম্পর্যুক্ত করেনইনি, বরং তার অবলম্বন করা তারিখের ব্যখ্যা দেননি বা ন্যায্যতা দেননি।"

তথ্যসূত্র

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.