অপটিক্যাল ফাইবার
অপটিক্যাল ফাইবার(ইংরেজি: Optical fiber) একধরনের পাতলা, স্বচ্ছ তন্তু বিশেষ, সাধারণত কাঁচ অথবা প্লাস্টিক দিয়ে বানানো হয়, যা আলো পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। ফাইবার অপটিকস ফলিত বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সেই শাখা যা এই অপটিক্যাল ফাইবার বিষয়ে আলোচনা করে।
অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে লম্বা দুরত্বে অনেক কম সময়ে বিপুল পরিমাণ তথ্য পরিবহন করা যায়। অপটিক্যাল ফাইবারের আরো অনেক সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এই ব্যবস্থায় তথ্য পরিবহনে তথ্য ক্ষয় কম হয়, তড়িৎ-চুম্বকীয় প্রভাব থেকে মুক্ত ইত্যাদি।
অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া আলোকসজ্জা, সেন্সর ও ছবি সম্পাদনার কাজেও বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইতিহাস
যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অপটিক্যাল কনসেপ্ট প্রথম আবিস্কার করেন ফরাসি বিজ্ঞানী Claude Chappe কর্তৃক ১৭৯০ সালে আবিস্কৃত অপটিক্যাল টেলিগ্রাফ। এই পদ্ধতিতে মনুষ্য অপারেটর এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারে বার্তা পাঠাতো। কিন্তু পরে ইলেক্ট্রিক টেলিগ্রাফ আসায় এই পদ্ধতি অকেজো হয়ে যায়। পরবর্তীতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৮০ সালে অপটিক্যাল টেলিফোন সিস্টেম আবিস্কার করেন যা ফটোফোন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। তিনি বাতাসে আলোক সিগণ্যাল পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন কিন্তু আবহাওয়া আলোকে যথার্থভাবে ট্রান্সমিট করতে পারতো না। ফলে তার এই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। বর্তমান ফাইবারে যে আলোর পূর্ণ আভ্যন্তরীন প্রতিফলন হয়, তা আবিস্কার করেন সুইস পদার্থবিদ Daniel Collodon ও ফরাসি পদার্থবিদ Jacones Babinet ১৮৪০ সালে। এই ধারণা নিয়ে ১৯২০ সালে Henrich Lamm এবং Munich নামের এক ছাত্র টেলিভিশনের ইমেজ বা ছবি স্বচ্ছ কাঁচদণ্ডের মধ্য দিয়ে পাঠাতে সমর্থ হন। কিন্তু তাদের আবিস্কৃত ইমেজ কোয়ালিটি খুব একটা ভাল ছিল না। এতদিন পর্যন্ত যেভাবে ট্রান্সমিশন করা হতো, তার সবই ছিল আনক্লাডিং। সেই কারণে বেশিরভাগ আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় সিগণ্যাল দূর্বল হতো। পরবর্তিতে আমেরিকান পদার্থবিদ Brian O'Brien সর্বপ্রথম ক্লাডিং অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারে সমর্থ হন।
তড়িৎ পরিবহনের সাথে তুলনা
যোগাযোগব্যবস্থায় অপটিক্যাল ফাইবার নাকি ইলেকট্রিক্যাল (বা তামা) তার কোনটি ব্যবহার করা হবে তা কিছু ছাড় এর উপর নির্ভর করে। যেসব ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যান্ডউইডথ দরকার বা অধিক দূরত্বে তথ্য প্রেরণ করতে হলে সাধারণত অপটিক্যাল ফাইবার পছন্দনীয়। এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে এতে তথ্যের ক্ষতি খুব কম হয়, ফলে অধিক দূরত্বে অ্যাম্পলিফায়ার বা রিপিটার ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। এবং এর ডাটা-পরিবহন ক্ষমতা এতই বেশি যে এই ক্ষমতা পেতে হাজার হাজার ইলেকট্রিক্যাল লিঙ্ক লাগবে কেবল একটি অপটিক্যাল ফাইবারকে প্রতিস্থাপন করতে। ফাইবার তামার তুলনায় অনেক হালকা: ৭০০ কিমি টেলিযোগাযোগ তামার কেবলের ওজন ২০ টন। এই একই কেবল যদি ফাইবার দিয়ে বানানো হয় তাহলে লাগে কেবল ৭ কেজি কাঁচ[1]। আরও সুবিধা হচ্ছে একাধিক ফাইবার পাশাপাশি অনেক দুরত্ব অতিক্রম করলেও ক্রসটক হয় না, যা কিনা কোন কোন ইলেকট্রিক কেবলের একটি সমস্যা।
স্বল্প দূরত্বে ও অল্প ব্যান্ডউইডথের ব্যবস্থায় তড়িৎ যোগাযোগ ব্যবহৃত হয়, কারণঃ
- উপাদানের খরচ কম
- ট্রান্সমিটার ও রিসিভার এর খরচ কম
- Splicing সহজ
- তড়িৎ শক্তি ও সংকেত একই সাথে পাঠানোর ক্ষমতা
তড়িৎ যোগাযোগের এই সুবিধার কারণে সাধারণত স্বল্প দুরত্বের ব্যবস্থায় অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হয় না, তবে গবেষণাগারে এসব প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে অথবা কম ব্যান্ডউইডথরে কোন ব্যবস্থায়ও অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হতে পারে, কারণঃ
- তড়িৎ-চুম্বকীয় বাধা (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফেরেন্স), আণবিক তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধে অপটিক্যাল ফাইবার কার্যকর।
- উচ্চ বৈদ্যুতিক রোধ, যার কারণে উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মাঝেও ব্যবহার করা যায়।
- হালকা ওজন, যা বিশেষ করে আকাশযানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
- কোন স্পার্ক হয় না, ফলে দাহ্য বস্তুর সাথেও ব্যবহার করা যায়।
- কোন তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরন হয় না, এবং সঙ্কেত না নষ্ট করে ট্যাপ করা কঠিন, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অতি গুরুত্বপূর্ণ।
- তারের আকার ছোট।
সরকারী মান
অনেক প্রস্তুতকারক অপটিক্যাল ফাইবার তৈরি করে থাকে। এদের ফাইবারগুলো যাতে যেকোন ব্যবস্থায় ঠিকমত কাজ করতে পারে এজন্য কিছু মান তৈরি করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন ফাইবার সম্পর্কিত কতগুলো মান প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ
- ITU-T G.651, "৫০/১২৫ µm মাল্টিমোড গ্রেডেড ইনডেক্স অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের ধর্মাবলী"
- ITU-T G.652, "সিঙ্গেল মোড অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের ধর্মাবলী"
বিভিন্ন সংস্থা থেকে অন্যান্য মান প্রকাশিত হয়েছে, যা ফাইবারের বিভিন্ন কর্মদক্ষতা নির্দেশ করে। কয়েকটি মান হলঃ
- ১০ গিগাবিট ইথারনেট
- FDDI
- ফাইবার চ্যানেল
- গিগাবিট ইথারনেট
- HIPPI
- SDH
- SONET
ফাইবার অপটিক সেন্সর
টান, তাপমাত্রা, চাপ ও আরো অনেক উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যম (Sensor) হিসেবে অপ্টিক্যাল ফাইবারকে ব্যবহার করা যায়। ছোট আকৃতি এবং কম বিদ্যুৎ খরচের কারণে তড়িৎ সেন্সরের থেকে অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা বেশি।
সেসিমিক সোনারের হাইড্রোফোন হিসেবে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হচ্ছে। ১০০ এর বেশি সেন্সর নিয়ে হাইড্রোফোন সিস্টেম তৈরি হয়েছে। তেল শিল্পে হাইড্রোফোন সেন্সর সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি জার্মান প্রতিষ্ঠান অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে লেজার মাইক্রোফোনও তৈরি করেছে।
তেলকুপের তাপমাত্রা ও চাপের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার সেন্সর তৈরি হয়েছে। এসব কাজের জন্য ফাইবার অপটিক উপযুক্ত কারণ অর্ধ-পরিবাহী সেন্সরগুলি এই তাপমাত্রা ও চাপ সহ্য করতে পারে না।
বোয়িং ৭৬৭ এর অপটিক্যাল গাইরোস্কোপ সেন্সর হিসেবেও অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হচ্ছে। কোন কোন গাড়িতেও আজকাল অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হচ্ছে।
অপটিক্যাল ফাইবারের অন্যান্য ব্যবহার
বড় লেখা== গঠন ==
- বুলেটকৃত তালিকা আইটেম
অপটিক্যাল ফাইবার কেবলস
শেষ সংযোগস্থান ও বিভক্তি (Termination and splicing)
আরো দেখুন
টুকিটাকি
- Longman Write-on Notes, Year 12 NCEA Physics Reference
তথ্যসূত্র
- Gambling, W. A., "The Rise and Rise of Optical Fibers", IEEE Journal on Selected Topics in Quantum Electronics, Vol. 6, No. 6, pp. 1084–1093, Nov./Dec. 2000
- Gowar, John, Optical Communication Systems, 2 ed., Prentice-Hall, Hempstead UK, 1993 (আইএসবিএন ০-১৩-৬৩৮৭২৭-৬)
- Hecht, Jeff, City of Light, The Story of Fiber Optics, Oxford University Press, New York, 1999 (আইএসবিএন ০-১৯-৫১০৮১৮-৩)
- Hecht, Jeff, Understanding Fiber Optics, 4th ed., Prentice-Hall, Upper Saddle River, NJ, USA 2002 (আইএসবিএন ০-১৩-০২৭৮২৮-৯)
- Nagel S. R., MacChesney J. B., Walker K. L., "An Overview of the Modified Chemical Vapor Deposition (MCVD) Process and Performance", IEEE Journal of Quantum Mechanics, Vol. QE-18, No. 4, April 1982
- Ramaswami, R., Sivarajan, K. N., Optical Networks: A Practical Perspective, Morgan Kaufmann Publishers, San Francisco, 1998 (আইএসবিএন ১-৫৫৮৬০-৪৪৫-৬)nayeem
বহিঃসংযোগ
- The Fiber Optic Association
- Lennie Lightwave's Guide To Fiber Optics
- Fibers article in RP Photonics Encyclopedia of Laser Physics and Technology
- How Fiber Optics Work
- Pulse Shaping for Optical Fiber Communication Systems
- Atikem Haile-Mariam, "Principles and Characteristics of Optical Fibers", International Lighting in Controlled Environments Workshop, T.W.Tibbitts (editor), NASA-CP-95-3309 (1994)