অনুপ্রাস

অনু শব্দের অর্থ পরে বা পিছনে আর প্রাস শব্দের অর্থ বিন্যাস, প্রয়োগ বা নিক্ষেপ। একই ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছের একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে সুন্দর ধ্বনিসাম্যের সৃষ্টি হয় তার নাম অনুপ্রাস।

বৈশিষ্ট্য

এর মূল বৈশিষ্ট্য গুলো হলো:

  • এতে একই ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ একাধিক বার ব্যবহৃত হবে।
  • একাধিক বার ব্যবহৃত ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ যুক্ত শব্দগুলো যথাসম্ভব পরপর বা কাছাকাছি বসবে।
  • এর ফলে সৃষ্টি হবে একটি সুন্দর ধ্বনি সৌন্দর্যের।

যেমন-

  1. কুশল কামনা কর কুসঙ্গ করিয়া (ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত)

– এখানে ‘ক’ ধ্বনি পাঁচবার এসেছে যা অলঙ্কার অনুপ্রাস।

  1. কুলায় কাপিছে কাতর কপোত দাদুরি ডাকিছে সঘনে

এখানে ‘ক’ ধ্বনি পাঁচবার এসেছে যা অলঙ্কার অনুপ্রাস।

  1. গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে (রবীন্দ্রনাথ)

এখানে ‘গ’ ধ্বনি আটবার এসেছে যা অলঙ্কার অনুপ্রাস।

প্রকারভেদ

অনুপ্রাস প্রধানত তিন প্রকার। অন্ত্যানুপ্রাস, বৃত্ত্যনুপ্রাস এবং ছেকানুপ্রাস।

অন্ত্যানুপ্রাস

কবিতার এক চরণের শেষে যে শব্দধ্বনি থাকে অন্য চরণের শেষে তারই পুনরাবৃ্ত্তিতে যে অনুপ্রাস অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম অন্ত্যানুপ্রাস। অর্থাৎ কবিতার দু’টি চরণের শেষে যে শব্দধ্বনির মিল থাকে তাকেই অন্ত্যানুপ্রাস বলে। একে অন্ত্যমিলও বলা হয়ে থাকে। যেমন: দিনের আলো নিভে এলো সূর্যি ডোবে ডোবে, আকাশ ঘিরে মেঘ টুটেছে ছাঁদের লোভে লোভে। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) – এখানে ‘ডোবে’ আর ‘লোভে’র অন্ত্যমিল তাই এটি অলঙ্কার অন্ত্যানুপ্রাস।

গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা ‘আম্মা গো, পানি দাও, ফেটে গেল ছাতি মা’ …নজরুল

উচ্চ কন্ঠে উঠিল হাসিয়া তুচ্ছ ছলনা গেল সে ভাসিয়া চকিতে সরিয়া নিকটে আসিয়া …রবীন্দ্রনাথ

বৃত্ত্যনুপ্রাস

একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হলে, বর্ণগুচ্ছ স্বরূপ অথবা ক্রম অনুসারে যুক্ত বা বিযুক্ত ভাবে বহুবার ধ্বনিত হলে যে অনুপ্রাসের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় বৃত্ত্যনুপ্রাস। যেমন: সাগর জলে সিনান করি সজল এলোচুলে। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) – এখানে একক ব্যঞ্জন ‘স’ পরপর তিনবার ও ‘ল’ পরপর চারবার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় এটি অলঙ্কার বৃত্ত্যনুপ্রাস।

মানুষের মনীষার মঞ্জুষার, মুগ্ধতার মহিমার- মৌনতাবাহক (আবুল হাসান (‘ম’ ৭ বার আবৃত্ত)

হবে সে সূর্যের সেবাদাসী (শামসুর রাহমান)

বাঙালি কৌমের কেলি কল্লোলিত কর কলাবতী (আল মাহমুদ)

ছেকানুপ্রাস

দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত বা বিযুক্ত ভাবে একইক্রমে মাত্র দু’বার ধ্বনিত হলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম ছেকানুপ্রাস। একে শ্রুত্যনুপ্রাস, লাটানুপ্রাস, মালানুপ্রাস, গুচ্ছানুপ্রাস, আদ্যানুপ্রাস বা সর্বানুপ্রাস হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। মনে রাখা দরকার যে একক ব্যঞ্জনে কোন ক্রমেই ছেকানুপ্রাস হয় না। উল্লেখ্য যে, এ ধরনের অনুপ্রাসের বাস্তব ব্যবহার বাংলায় খুব বেশি দেখা যায় না। যেমন: করিয়াছ পান চুম্বন ভরা সরস বিম্বাধরে। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) – এখানে যুক্ত ব্যঞ্জন ‘ম্ব’ একের অধিকবার ক্রমানুসারে ধ্বনিত হয়েছে চুম্বন ও বিম্বাধরে এর মধ্যে, তাই এটি অলংকার ছেকানুপ্রাস।

আরও কিছু উদাহরণ: অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? (সুধীনদত্ত)

একমাত্র গোধূলীবেলায় সবকিছু বারাঙ্গনার মত রাঙ্গা হয়ে যায় (শহীদ কাদরী)

নিন্দাবাদের বৃন্দাবনে ভেবেছিলাম গাইব না গান (নজরুল)

সাপের অঙ্গের মতো ভঙ্গি ধরে টান মারে মিছিলে রাস্তায় (আলা মাহমুদ)

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.