অনশ্বর (উপন্যাস)
অনশ্বর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪ - ১৯৫০) রচিত অন্তিম ও অসমাপ্ত উপন্যাস। বিভূতিভূষণ রচিত প্রথম ছয়টি অধ্যায়ের পর, বাকীর সপ্তম অধ্যায়টি সাহিত্যিক গজেন্দ্রকুমার মিত্র লিখলেও, অষ্টম অধ্যায় থেকে শেষ পর্যন্ত লেখেন বিভূতিপুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে 'বিভূতি উপন্যাস সমগ্র ( ২য় খন্ড)' এ রচনাটি অন্তর্ভুক্ত হয়।
নামকরণ
পিতা-পুত্রের এক নিবিড়, স্বতঃস্ফূর্ত ও অকৃত্রিম ভালবাসার বন্ধনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসের কাহিনী। মানুষ নশ্বর, কিন্তু তার হৃদয়ের স্নেহপ্রীতি অবিনশ্বর, তা জন্ম-মৃত্যুর সীমানা পেরিয়ে জীবনের এপার থেকে মৃত্যুর ওপার পর্যন্ত বিস্তৃত। একেই সম্ভবত 'অনশ্বর' আখ্যা দিয়েছেন বিভূতিভূষণ।
বিষয়বস্তু
প্রথম ছয় অধ্যায়ের মধ্যে আমরা দেখতে পাই, দেশভাগ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে গ্রাম থেকে পুত্র শ্যামলাল-রূপ চারাটিকে নির্মূল করে নিয়ে এক অজানা রাজ্যে পাড়ি দিলেন পিতা রামলাল - তাকে স্থিতি করে মহীরূহে পরিণত করবেন এই আশায়। এই সূচনা-পর্বটুকু লিখে যেতে পেরেছিলেন লেখক।
সময়োচিত উপলব্ধি
গ্রামের গন্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে যাবার আহ্বান শুধু নয়, এর মধ্যে সময়োচিত একটি চিন্তা ও অনুভূতি অবিচল চিত্তে প্রকাশ করেছিলেন মানবপ্রেমিক ও সমাজসচেতন লেখক এই রচনায় -
'"পশ্চিমবঙ্গে আর কিছু হবে না, উদ্বাস্তু বহু এসেচে, যেখানে সেখানে গাছতলায় মাঠে শ্মশানে পড়ে মরচে। কেউ তাদের দিকে তাকায় না। কদিন ওদের এমন কষ্ট ভোগ করতে হবে কে জানে? যা নেবার ওরাই নিক বাংলাদেশ থেকে। না নিলে ওরা খাবে কি? শ্যামকে নিয়ে সে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেচে, এতটুকু পশ্চিমবঙ্গে আর কুলোবে না সব বাঙালীর। বাইরে বেরিয়ে পড়তে হবে বাংলার লোকের। এতদিন পৈতৃক জমির বোনা ধানের ভাত খেয়ে চলেছে, কিন্তু তাতে আর চলবে না। যে অন্নকষ্টের তাড়নায় জগতের বড় বড় জাতি বাইরে গিয়ে ছোট বড় উপনিবেশ স্থাপন করেচে, দূর দুর্গম মরুভূমিতে সোনার খনির সন্ধানে বেড়িয়েছে, রকি পর্বতের শৃঙ্গে উঠেছে পাখির ডিম খুঁজতে, ডুবোজাহাজে রত্ন সন্ধান করেচে, শক্ত হাতে বর্বরদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জঙ্গল কেটে আশ্রয় নির্মাণ করেচে, বাঙালীকে তাদের মতো হতে হবে।"
তথ্যসূত্র
- 'বিভূতি উপন্যাস সমগ্র (২য় খন্ড)' - উপন্যাস পরিচয়, পৃ: ১১৮৪ - ১১৮৫ ।