হর্ষবর্ধন

হর্ষবর্ধন বা হর্ষ (৬০৫৬৪৭) উত্তর ভারতের এক খ্যাতনামা সম্রাট যিনি ৬০৬ থেকে ৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ (মতান্তরে ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত শাসন করেন। তিনি পুষ্যভূতি বংশীয় রাজা প্রভাকর বর্ধনের সন্তান ছিলেন।

হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তার

৬ষ্ঠ শতকের মাঝের দিকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে উত্তর ভারত ছোট ছোট প্রজাতন্ত্র ও রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বড় ভাই থানেসারের রাজা রাজ্যবর্ধন গৌড়ের সম্রাট শশাংকের হাতে নিহত হলে ৬০৬ সালে হর্ষকে রাজা ঘোষণা করা হয়; তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। [1] হর্ষ পাঞ্জাব থেকে মধ্য ভারত পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রগুলিকে একত্রিত করেন। ক্ষমতার শীর্ষে পশ্চিমে পাঞ্জাব থেকে শুরু য়ে পূর্ব বঙ্গ ও ওড়িশা পর্যন্ত এবং নর্মদা নদীর উত্তরে অবস্থিত সমস্ত সিন্ধু-গাঙ্গেয় অববাহিকাতে হর্ষবর্ধনের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। নর্মদার দক্ষিণে রাজ্য বিস্তার করার চেষ্টা করার সময় দক্ষিণে চালুক্য বংশীয় রাজা দ্বিতীয় পুলকেশী-র কাছে পরাজিত হন ৬১৮-৬১৯ সালে।

হর্ষের রাজত্বে সুশাসন এবং শান্তি বজায় থাকার কারণে বহুদূর দেশ থেকেও বহু শিল্পী , বিদ্বান ব্যক্তি ও ধর্ম প্রচারক তার রাজসভায় সমাদৃত হন[২]। চাইনিস পরিব্রাজক xuansang রাজা হর্ষের রাজসভায় উপনীত হন এবং তার রাজসভার সুবিচার এবং রাজার দানশীলতার সম্বন্ধে [২] প্রশস্তি বাক্য লেখেন নিজের ভ্রমণকাহিনীতে।

হর্ষবর্ধন কবিতা ও নাটক লিখতেন। তিনি নাগানন্দ, প্রিয়দর্শিকা এবং রত্নাবলী নামের তিনটি সংস্কৃত নাটক লেখেন। কনৌজ শহর ছিল হর্ষবর্ধনের রাজধানী এবং এখানে শিল্প-সাহিত্যের চর্চা হত। বিখ্যাত বাণভট্ট হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন। তিনি হর্ষবর্ধনের জীবনীমূলক গ্রন্থ হর্ষচরিত রচনা করেন; এটি ছিল সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রথম ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ। হর্ষবর্ধন বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন; তিনি ভারতে বহু বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন এবং নালন্দা মহাবিদ্যালয়ে অনেক দান করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় রাজা যিনি চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

তথ্যসূত্র

  1. RN Kundra & SS Bawa, History of Ancient and Medieval India

২। International Dictionary of Historic Places: Asia and Oceania by Trudy Ring, Robert M. Salkin, Sharon La Boda p. 507

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.