হাসান আল বান্না
হাসান আল বান্না (আরবি ভাষায় حسن البنا) (জন্ম ১৪ অক্টোবর , ১৯০৬-মৃত্যু ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৯) ছিলেন একজন মিশরীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারক। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড দলের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইসলামকে বাস্তব জীবনের জীবন ব্যবস্থা ও কুরআনকে এই ব্যবস্থার একমাত্র সংবিধান বলে মনে করতেন।[1] তিনি পাশ্চাত্যের বস্তুবাদ, ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদ এবং মিশরের প্রথাগত আলেমদের সমালোচনা করেন।[2]
হাসান আল বান্না حسن البنا | |
---|---|
![]() | |
মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা ও ১ম জেনারেল গাইড | |
কাজের মেয়াদ ১৯২৮ – ১৯৪৯ | |
উত্তরসূরী | হাসান আল হুদাইবি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | বাহেইরা, মিশর | ১৪ অক্টোবর ১৯০৬
মৃত্যু | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ ৪২) কায়রো, মিশর | (বয়স
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | Dar al-Ulum |
ধর্ম | সুন্নি মুসলিম, সুফি, |
প্রাথমিক জীবন
১৯০৬ সালে ১৪ অক্টোবর মিশরের রাজধানী কায়রোর কাছে মাহমুদিয়া অঞ্চলে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রহমান বান্না, যিনি একজন ইমাম ছিলেন।,[3] বারো বছর বয়সে তিনি সুফীবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি সেই কিশোর বয়সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় মাদ্রাসায় রাশাদ আদ নামক প্রতিষ্ঠানে। এরপর তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দারূল উলুমে ভর্তি হন। ১৯১৭ সালে সেখান থেকে তিনি ডিপ্লোমা লাভ করেন। হাসান আল বান্না ১৯২৭ সালে সরকারী স্কুলের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় তিনি মিশরে প্রচুর ভ্রমণ করেন এবং সেই সময়কার বড় বড় আলেমদের সংস্পর্শে আসেন। তার নজরে পড়ে পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রভাবে কিভাবে মিশরের সমাজ ক্রমশ ভোগের দিকে ঝুঁকে পড়ছে কিভাবে সনাতন মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে আসছে।[4] পরবর্তীতে তিনি আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। সেখানে তিনি সবিস্ময়ে লক্ষ করেন কিভাবে খ্রীষ্টান মিশনারীরা ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকতাকে উৎসাহিত করে চলে।[4] ১৯২৮ সালে ৬ জন ইসলামী ব্যক্তিত্বের সহযোগিতায় হাসান আল বান্না গঠন করেন “ইখওয়ানুল মুসলিমিন” সংগঠনটি আর তিনি সেই সংগঠনের আমির নির্বাচিত হন। সংগঠনটিকে সামাজিক ভিত্তি দিতে পুরো মিশর জুড়ে তিনি একইসঙ্গে সমাজকল্যাণ এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রচারের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। মিশরের প্রতিটি শহরে গড়ে ওঠে শাখা সংগঠন। ইসলামকে সবার নিকট উপস্হাপনের জন্য তিনি মহিলাদেরকে নিয়ে আখওয়াত আল মুসলিমাত নামক সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৩৩ সালে আল ইখওয়ানের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় একটি পত্রিকা প্রকাশের ।[5] পত্রিকাটির নাম মাজাল্লাতুল ইখওয়ানুল মুসলিমিন। তার এই কর্মকান্ড মিশরের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীকে ভীত করে তোলে। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে শাসকশ্রেণীর লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডার গুলিতে তিনি নিহত হন।
নাৎসী জার্মানীর সাথে সম্পর্ক
১৯৩০-এর শুরুতে হিটলার যখন জার্মানির ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন হাসান আল বান্নার সাথে নাৎসীদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি হিটলারকে ওয়াদা করেন এই বলে যে, জেনারেল রোমেলের প্যাঞ্জার ডিভিশন যখন কায়রো আর আলেকজান্দ্রিয়ায় প্রবেশ করবে, তখন ব্রিটিশ বাহিনী যাতে সম্পূর্ণ নির্মূল হয় তা মুসলিম ব্রাদারহুড নিশ্চিত করবে।[6] তিনি হিটলারের মাইন কাম্ফ অনুবাদ করে আমার জিহাদ নামে সমগ্র মিশরে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।[6]
তথ্যসূত্র
- John L. Esposito, সম্পাদক (২০১৪)। "Banna, Hasan al-"। The Oxford Dictionary of Islam। Oxford: Oxford University Press। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- Patrick S. O'Donnell (২০১০)। "al-Banna', Hasan (1906–49)"। Oliver Leaman। The Biographical Encyclopaedia of Islamic Philosophy। Continuum। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- "من أعلام الدعوة والحركة الإسلامية المعاصرة":الشيخ المحدّث أحمد عبد الرحمن البنا الساعاتي بقية السلف وزينة الخلف، مجلة المجتمع الكويتية، 20 ديسمبر 2008م
- হামেদী, খলিল আহমদ (২০১৪-০৩-২১)। "ইসলামের পুনর্জাগরণে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ভূমিকা"। Shibir Online Library (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-১০।
- "ইসলামের পুনর্জাগরণে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ভূমিকা | Page 5 of 9"। Shibir Online Library (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৩-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-১০।
- David Meir-Levi (২০০৭)। "The Nazi Roots of Palestanian Nationalism and Islamic Jihad" (PDF)। David Horowitz Freedom Center। পৃষ্ঠা 6–8। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।