মূর্তি

হিন্দুধর্মে মূর্তি (যা বিগ্রহ নামেও পরিচিত) বলতে দেবতার প্রতিমাকে বোঝায়। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “অবয়ব”। মূর্তি দেবতার প্রতিনিধি। সাধারণত পাথর, কাঠ, ধাতু অথবা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়। বাঙালী হিন্দুরা মূর্তির মাধ্যমে দেবতার পূজা করে থাকেন। [1] মূর্তিতে দেবতার আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরই হিন্দুরা সেই মূর্তিকে পূজার যোগ্য মনে করেন।[2] ধর্মীয় সংস্কার বা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।[1]

গণেশ চতুর্থী উৎসবে পূজিত একটি মৃন্ময় গণেশ মূর্তি

মূর্তিপূজা

দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজিত সপরিবার দুর্গার মৃন্ময় মূর্তি
বলরাম (বামে) ও কৃষ্ণের প্রস্তর মূর্তি, কৃষ্ণ-বলরাম মন্দির, বৃন্দাবন, ভারত

হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি প্রধানত মানুষের আদলে নির্মিত। পশুর আদলে বা আংশিক পশুর আদলেও (যেমন, হনুমান, নৃসিংহ, গণেশ) দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে। অধিকাংশ এই জাতীয় মূর্তিতেই দেবতাদের পূজা করা হলেও, হিন্দুধর্মে শিবলিঙ্গশালগ্রাম শিলার মতো নিরাকার প্রতীকেও দেবতার পূজা প্রচলিত রয়েছে।[3] দেবতার নররূপ হিন্দুদের ধ্যানের বিশেষ সহায়ক হয়ে থাকে। এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় বলেছেন,

[4]

শিল্পশাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী মূর্তি নির্মাণ করা হয়ে থাকে।[5] পঞ্চলোহ নামক সঙ্কর ধাতুটি কখনও কখনও মূর্তি নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হয়।[6] "প্রাণপ্রতিষ্ঠা" অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরোহিত এই সব মূর্তি পূজার উপযোগী করে তোলেন।

ভক্তিবাদী সম্প্রদায়গুলিতে মূর্তিপূজা ঈশ্বরোপাসনার একটি বিশেষ অঙ্গ। ভক্তিবাদীরা মূর্তিপূজা বা মূর্তিসেবার মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের মধুর সম্পর্ককে সুদৃঢ় রাখার কথা বলেন। যদিও আর্য সমাজব্রাহ্মসমাজের মতো সম্প্রদায়গুলি মূর্তিপূজাকে পৌত্তলিকতা আখ্যা দিয়ে তা বর্জন করে থাকে।[7][8][9]

সৎগুরু শিবায়া সুব্রহ্মণ্যস্বামীর মতে, "এই ব্যবস্থাটি টেলিফোনের মাধ্যমে কথা বলার মতো। কেউ টেলিফোনের সঙ্গে কথা বলে না; বরং টেলিফোনের মাধ্যমে একজনের সঙ্গে আর এক জনের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। টেলিফোন ছাড়া দূরে থাকা লোকটির সঙ্গে কথা বলা অসম্ভব। ঠিক তেমনি মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত মূর্তির সাহায্য ছাড়া কেউ দেবতার সঙ্গে কথা বলতে পারে না।"[10] নৃতাত্ত্বিক ক্রিস্টোফার জন ফুলারও লিখেছেন যে, হিন্দুধর্মে দেবতা আর দেবতার মূর্তি এক নয়। পূজ্য দেবতার সত্ত্বাটিকে মূর্তির মধ্যে ধ্যান করা হয়, কিন্তু মূর্তিটি পূজ্য দেবতা হয়ে পড়ে না।[11]

আগমশাস্ত্র মতে, "স্থূলমূর্তি" বা "বিম্বমূর্তি" (মূর্তির শরীর) ও "মন্ত্রমূর্তি" (মূর্তির শক্তি) এক নয়। মন্ত্রমূর্তিই কেবল প্রাচীন মন্দিরগুলিতে পূজিত হয়ে আসছে। বিম্বমূর্তিতে স্থিত মন্ত্রমূর্তিটিকে যথাযথ অনুষ্ঠান, মুদ্রাপ্রদর্শন, স্তোস্ত্রপাঠ ও বলিদানের মাধ্যমেই পূজা করা সম্ভব।

দক্ষিণ ভারতে কালো গ্র্যানাইট পাথরের মূর্তি নির্মিত হয়। উত্তর ভারতে শ্বেতপাথরের মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।[12] বঙ্গদেশে মাটি, ধাতু, কাঠ ও পাথর দিয়ে মূর্তি নির্মাণের প্রথা রয়েছে।

পাদটীকা

  1. Klostermaier, Klaus K. A Survey of Hinduism. 1989 page293-5
  2. Kumar Singh, Nagendra. Encyclopaedia of Hinduism, Volume 7. 1997, page 739-43
  3. Hinduism: Beliefs and Practices, by Jeanne Fowler, pgs. 42-43, at Books.Google.com and Flipside of Hindu symbolism, by M. K. V. Narayan at pgs. 84-85 at Books.Google.com
  4. ভগবদ্গীতা, দ্বাদশ অধ্যায়, ভক্তিযোগ, শ্লোক ৫
  5. For Śilpa Śāstras as basis for iconographic standards, see: Hopkins, p. 113.
  6. Lo Bue, Erberto (1991). "Statuary Metals in Tibet and the Himalayas: History, Tradition and Modern Use", Bulletin of Tibetology. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০০৯ তারিখে
  7. Naidoo, Thillayvel (১৯৮২)। The Arya Samaj Movement in South AfricaMotilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 158। আইএসবিএন 8120807693।
  8. Lata, Prem (১৯৯০)। Swami Dayānanda Sarasvatī। Sumit Publications। পৃষ্ঠা x। আইএসবিএন 8170001145।
  9. Bhagirathi Nepak. Mahima Dharma, Bhima Bhoi and Biswanathbaba ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে
  10. Satguru Sivaya Subramuniyaswami, "Ten Questions people ask About Hinduism …and ten terrific answers!" (p. 7)
  11. The Camphor Flame: Popular Hinduism and society in India, pg. 60 at Books.Google.com
  12. The Goddess lives in upstate New York, by Corinne Dempsey, pg. 228,

তথ্যসূত্র

  • Hopkins, Thomas J. (১৯৭১)। The Hindu Religious Tradition। Belmont, California: Dickenson Publishing Company।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.